Uses of Kale Jera.. / কালোজিরার ব্যবহার..
হোমিওপ্যাথিক ও দেশীয়
চিকিৎসায় সহযোগী ওষুধ রূপে
এর ব্যবহার
Dr. Md. Shahidul Alam
ডাঃ মোঃ শহীদুল আলম
mail me: dralambd at gmail dot com
ডাঃ মোঃ শহীদুল আলম
mail me: dralambd at gmail dot com
উপক্রমনিকাঃ
নবী করিম (সাঃ) মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগ আরোগ্যকারী ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন- "তোমাদের জন্য 'সাম' ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে কালো জিরায়। আর সাম হলো মৃত্যু।" সুতরাং কালো জিরা হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী। সু-স্বাস্থ্য অর্জনে ও সংরক্ষনে কালোজিরা জাত ওষুধ গ্রহনে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা সৃষ্টি করে না।
সৃষ্টি সমূহের জন্য করুণা ও দয়া স্বরূপ নবী করিম (সাঃ) প্রত্যাদেশ ব্যতীত কোন কথা বলেননি।
আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য তিনি আমাদের কালোজিরা ও মধু সর্ম্পকে অবগত করেছেন। অতএব এ দুটোর উপরই ব্যপক গবেষনা আবশ্যক।
কালোজিরায় কি আছেঃ
এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ। এতে রয়েছে ক্যন্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।
ক্রিয়াক্ষেত্রঃ
মস্তিষ্ক, চুল, টাক ও দাঁদ, কান, দাঁত, টনসিল, গলাব্যথা, পোড়া নারাঙ্গা বা বিসর্গ, গ্রন্থি পীড়া, ব্রণ, যাবতীয় চর্মরোগ, আঁচিল, কুষ্ঠ, হাড়ভাঙ্গা, ডায়াবেটিস, রক্তের চাড় ও কোলেষ্টরেল, কিডনী, মুত্র ও পিত্তপাথরী, লিভার ও প্লীহা, ঠান্ডা জনিত বক্ষব্যাধি, হৃদপিন্ড ও রক্তপ্রবাহ, অম্লশূল বেদনা, উদরাময়, পাকস্থলী ও মলাশয়, প্রষ্টেট, আলসার ও ক্যান্সার।
চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী।
কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর আপনি প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা যেতে পারেন।
রোগপ্রতিরোধক কালো জিরা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ওষুধ প্রস্তুতঃ
আগেই বলেছি- আমরা কালো জিরার টীংচার, বড়ি ও তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছি। কখনো এককভাবে কখনো অন্য ওষুধের সাথে সংমিশ্রিত করে রোগীক্ষেত্র প্রয়োগ করে থাকি।
কালোজিরা তেলের সাথে জলপাই তেল, নিম তেল, রসুনের তেল, তিল তেল মিশিয়ে নেয়া যায়।
কালোজিরা আরক+কমলার রস
ব্যবহারঃ
কালোজিরা + পুদিনা
চায়ের সাথে কালোজিরা
কালোজিরা + রসুন + পেঁয়াজ
কালোজিরা + গাজর
মাথাব্যথাঃ
মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরা তেল মালিশ করূন।
৩ দিন খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান করুন। পাশাপাশি লক্ষণ সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচন করূর।
সচরাচর মাথাব্যথায় মালিশের জন্য রসুনের তেল, তিল তেল ও কালোজিরা তেলের সংমিশ্রণ মাথায় ব্যবহার করুন। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ন্যাট্রম মিউর ও ক্যালকেরিয়া ফসের মধ্যে লক্ষণ মিলিয়ে একটা হোমিওপ্যাথিক ও অপরটা বায়োকেমিক হতে প্রয়োগ করুন। প্রয়োজন বোধে প্রথমে বেলেডোনা ব্যবহার করে নিতে পারেন।
চুলপড়াঃ
লেবু দিয়ে সমস্ত মাথার খুলি ভালোভাবে ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তারপর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সম্পুর্ন মাথার খুলিতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন। ১ সপ্তাতেই চুলপড়া বন্ধ হবে।
মাথার যন্ত্রনায় কালোজিরার তেলের সাথে পুদিনার আরক দেয়া যায়।
এক্ষেত্র পুদিনার টীংচার রসুনের তেল, তিলতেল, জলপাই তেল ও কালোজিরা তেল একসাথে মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে।
কফ ও হাঁপানীঃ
বুকে ও পিঠে কালোজিরা তেল মালিশ। এক্ষেত্রে হাঁপানীতে উপকারী অন্যান্য মালিশের সাথে এটা মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে। রীতিমতো হোমোওপ্যাথিক ওষুধ আভ্যন্তরীন প্রয়োগ।
স্মরণশক্তি ও ত্বরিত অনুভুতিঃ
চা চামচে ১ চামচ কালোজিরা তেল ও ১০০ গ্রাম পুদিনা সিদ্ধ ১০ দিন সেব্য। পাশাপাশি ক্যালকেরিয়া ফস ১২এক্স, ৩০এক্স দিনে ৩ বার ৪ বড়ি করে। সামান্য ঈষদোষ্ণ পানি সহ সেবন।
কালোজিরার টীংচার ও পুদিনার টীংচারের মিশ্রণ দিনে ৩ বার ১৫-২০ ফোটা করে আহারের ১ঘন্টা আগে এবং ১ ঘন্টা পরে ক্যালকেরিয়া ফস ১২এক্স ও ৪বড়ি করে। প্রয়োজন বোধে ক্যালি ফস ১২এক্স ও একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিসঃ
কালোজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালোজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী। রোগীর অবস্থানুযায়ী অন্যান্য হোমিওপ্যাথিক মাদার ও ভেষজ সহ ব্যবস্থেয়।
কিডনির পাথর ও ব্লাডারঃ
২৫০ গ্রাম কালো জিরা ও সমপরিমান বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুড়ে করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রন আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধা চা কাপ পরিমাণ তেলসহ পান করতে হবে।
কালিজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা করে সেবন। পযায়ক্রমে বার্বারিস মুল আরক বা নির্দেশিত হলে অন্য কোন হোমিও অথবা বায়োকেমিক ওষুধ পাশাপাশি।
মেদ ও হৃদরোগ/ধমনী সংকোচনঃ
চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হবে, তেমনি মেদ ও বিগলিত হবে।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাসষ্ট্রিকঃ
এককাপ দুধ ও এক বড় চামচ কালোজিরা তেল দৈনিক ৩বার ৫-৭ দিন সেবনে আরোগ্য হয়।
চোখেরপীড়াঃ
রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরূতে কালোজিরা তেল মালিশ করূন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন।
নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টীংচার সেবনে আর তেল মালিশে উপকার হবে। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন।
উচ্চরক্তচাপঃ
যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথ খাবেন। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরা ভর্তা খান। এ উভয় পদ্ধতির সাথে রসুনের তেল সাথে নেন। সারা দেহে রসুন ও কালোজিরা তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালোমনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তরও করা যায়।
ডায়রিয়াঃ
সেলাইন ও হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় এক চামচ কালোজিরা তেল দিনে ২ বার ব্যবস্থেয়। এর মুল আরকও পরী্ক্ষনীয়।
জ্বরঃ
সকাল-সন্ধায় লেবুর রসের সাথে ১ বড় চামচ কালোজিরা তেল পান করুন আর কালোজিরার নস্যি গ্রহন করুন। কালোজিরা ও লেবুর টীংচার (অ্যাসেটিক অ্যাসিড) সংমিশ্রন করেও দেয়া যেতে পারে।
যৌন-দুর্বলতাঃ
কালোজিরা চুর্ণ ও যয়তুনের তেল (অলিভ অয়েল), ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাটি মধু = একত্রে মিশিয়ে সকাল খাবারের পর ১চামচ করে সেব্য।
কালোজিরার মূল আরক, হেলেঞ্চা মুল আরক, প্রয়োজনীয আরো কোন মুল আরক অলিভ অয়েল ও মধুসহ পরীক্ষনীয়।
স্ত্রীরোগ, পসব ও ভ্রুন সংরক্ষণঃ
কালোজিরা মৌরী ও মধু দৈনিক ৪ বার সেব্য।
স্নায়ুবিক উত্তেজনাঃ
কফির সাথে কালোজিরা সেবনে দুরীভুত হয়।
চেহারার কমনীয়তা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধিঃ
অলিভ অয়েল ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে অঙ্গে মেখে ১ ঘন্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলন।
উরুসন্ধিপ্রদাহঃ
স্থানটি ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩দিন সন্ধায় আক্রান্ত স্থানে কালোজিরা তেল লাগান সন্ধ্যায়, সকালে ধুয়ে নিন।
ছুলি/শ্বেতীঃ
আক্রান্ত স্থানে আপেল দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। ১৫দিন হতে ১মাস।
আঁচিলঃ
হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। হেলেঞ্চা মুল আরক মিশিয়ে নিলেও হবে। সাথে খেতে দিন হোমিও ওষুধ।
পিঠ ও বাতঃ
আক্রান্ত পিঠে ও অন্যান্য বাতের বেদনায় কালোজিরা তেল মালিশ করুন। খেতে দিন কোন নির্বাচিত হোমিওপ্যাথি ওষুধ।
সকল রোগের প্রতিষেধকঃ
মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
2 comments:
ডাক্তার সাহেব,
আস-সালাম-উ-আলাইকুম।ইন্টারনেট খোঁজার সময় আপনার এই চমৎকার আর্টিকেলটি পেয়ে গেলাম।জানিনা আপনি ইদানিং ব্লগপোস্টটি চেক করেন কিনা..তাই অনেকটা অনিশ্চয়তা নিয়েই আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই..আপনার ব্লগেই উত্তরটা আশা করছি; যদি আপনার সময় হয়। প্রশ্নটি হলো, আমি কি মধু, কালিজিরা আর রসুন একসাথে গ্রহণ করতে পারবো। যদি উত্তরটি হ্যাঁ সূচক হয়, তবে দয়া করে জানাবেন কি অনুপাতে ব্যবহার করতে পারি এবং সেবনের উত্তম সময় কোনটি? আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ!
শ্রদ্ধাস্পদেষু ডাক্তার সাহেব,
আপনার চমৎকার এই নিবন্ধটির জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। কালো জিরা এবং এর তেলের উপকারিতা সম্পর্কে অনলাইনে তালাশ করতে গিয়ে আপনার এই ব্লগটি পেলাম।
নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখুন,আমার মতো আরও অনেকে উপকৃত হবেন, সন্দেহ নেই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা!
Post a Comment